ত্রিশাল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: (প্রকাশের তারিখ: 10-Jun-2024)
ত্রিশাল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ
আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেণ্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল হক নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাফ-কওলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

তিনি এ অফিসে যোগদানের পর থেকে এ দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা দলিল লেখক সমিতি, মসজিদ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের চাঁদা ছাড়া বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২৭টি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলিল হেবাবিল এওয়াজ, আমমোক্তার নামা ও দানপত্র ও ঘোষণাপত্র দলিল। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। গত মাসের বছরের রেজিস্ট্রি করা দলিল পরীক্ষা করলে এর সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করেন অনেকেই। এদিকে উপজেলার বীররামপুর এলাকার এক প্রবাসীর জমি তার শ্যালকরা জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়াদাতা বানিয়ে লিখে নিয়ে যায়। এবিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল হকসহ ৫ জনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এমন একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে আসছে।
দলিল করতে যে দাতা গ্রহীতাদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।সামান্যতম জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে যে,মানুষকে হইতে হয় ব্যাপক হয়রানী।দলিল জমা দেওয়ার পরেও টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল উল্টাপাল্টা করা হয়।
রোববার সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, শেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
এক ভুক্তভোগী জানান, আমার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। আরও কত হয়রানি। বালিপাড়ার বাসিন্দা আজিজুল হক জানান, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হলো ঘুষের খারখানা। ঘুষ ছাড়া কোন দলিল হয় না। ত্রিশাল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল উদ্দিন সরকার বলেন, দুর্নীতি যারা করে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। দলিলে কোন টাকা নেওয়া হয় না। প্রায় সময় দেখা যায় এক হাজার করে নেওয়া হয়। অফিসে খরচ অনেক বেশি ।
এ বিষয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল হকের মোবাইল ফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি রিসিভ করেননি। বার্তা পাঠিয়েও কোন উওর মিলেনি।

এই বিভাগের আরো খবর